ঢাকা , শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫ , ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​মারধর-সংসার ভাঙার চেষ্টা : ৫ পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ৩০-০৭-২০২৫ ০৯:৪০:২৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ৩০-০৭-২০২৫ ০৯:৪০:২৪ অপরাহ্ন
​মারধর-সংসার ভাঙার চেষ্টা : ৫ পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত
পুলিশের ডিআইজি থেকে এএসপি পদমর্যাদার পাঁচ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো হলো—কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, অধস্তনের স্ত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে সংসার ভাঙার চেষ্টা, অভিযোগ জানাতে আসা ব্যক্তিকে মারধর এবং গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে নির্যাতন করা।

বুধবার (৩০ জুলাই) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক পাঁচ প্রজ্ঞাপনে তাদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জানানো হয়।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন—রাজশাহীর সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমান, রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক ডিসি মোহাম্মদ শিবলী কায়সার, র‌্যাবের অতিরিক্ত এসপি জুয়েল চাকমা, ডিএমপির সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগের সাবেক এডিসি (এসপি পদে সুপার নিউমারারারি পদোন্নতি পাওয়া) রাজীব দাস ও বরিশাল আরআরএফের এএসপি আফজাল হোসেন।

এসপি শিবলী কায়সারকে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মোহাম্মদ শিবলী কায়সার পুলিশ সুপার, রংপুর হিসেবে কর্মরত থাকাবস্থায় গত ১৩ মার্চ বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে জনৈক লিপি খান ভরসার পক্ষে তার ম্যানেজার মো. পলাশ হাসান চাঁদা দাবির বিষয়ে কোতয়ালি থানায় এজাহার দায়ের করতে গেলে উক্ত এজাহারে বর্ণিত কর্মকর্তার নাম উল্লেখ রয়েছে খবর শুনে তিনি দ্রুত থানায় আসেন এবং মো. পলাশ হাসানকে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন। উক্ত অবস্থায় থানায় কর্তব্যরত প্রহরী নারী মোছা. মৌসুমী আক্তারের রাইফেল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে থানার অফিসার ও ফোর্স তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। বেসামরিক ব্যক্তির প্রতি তার এমন উগ্র আচরণ ও আক্রোশ থাকায় এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান থাকায় তিনি কর্মরত থাকলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং বিভাগীয় মামলার তদন্ত কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার করতে পারে বিধায় তাকে দায়িত্ব হতে বিরত রাখা সমীচীন। তার এহেন আচরণ ‘অসদাচরণের’ শামিল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সেহেতু, মোহাম্মদ শিবলী কায়সারকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুসারে ‘অসদাচরণের’ অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় বিধি ১২ উপবিধি (১) অনুযায়ী গত ২৪ জুলাই থেকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।

র‌্যাবের অতিরিক্ত এসপি জুয়েল চাকমাকে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা ঢাকায় সিআইডিতে কর্মরত থাকাকালে তার নেতৃত্বে জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) ডা. মো. জিল্লুর রহমানকে ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ না করে তাকে গ্রেপ্তারপূর্বক বরিশাল শহরের হোটেল শামস আবাসিকে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করেন এবং আটকের তিন দিন পর বিজ্ঞ আদালতে হাজির করেন, যা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৬১ ধারা লঙ্ঘন। উক্ত কর্মকর্তা ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামানসহ মোট চারজন ডাক্তারকে গ্রেপ্তারের পর যথাসময়ে তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির না করে তাদেরকে হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে মারপিট ও ইলেকট্রিক শক দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং ডা. লুইস সৌরভ সরকার ও ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডলকে আটক রাখা অবস্থায় মানসিক অত্যাচার করেন এবং ভয়-ভীতি ও জীবননাশের হুমকি প্রদান করেন। এ ছাড়া তাদের স্বীকারোক্তির ভিডিওসহ মামলার গোপনীয় তথ্যাদি ডিজিটাল মাধ্যম দ্বারা জনসম্মুখে প্রকাশ করেন। ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা ও ডা. মুসতাহিন হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি লাঠি দিয়ে মারার নির্দেশ প্রদান করেন। অভিযোগকারীদেরকে আটকের সময় বেআইনিভাবে তাদের মোবাইল, ল্যাপটপ এবং গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি জব্দ তালিকা ব্যতীত হেফাজতে নেন এবং যথাসময়ে সেগুলো ফেরত না দিয়ে দীর্ঘ প্রায় এক বছর অন্যায়ভাবে নিজের হেফাজতে রাখেন। তিনি বরিশাল ও খুলনায় অভিযান পরিচালনাকালে টিভি সাংবাদিককে উপস্থিত রাখেন এবং ঢাকার সিআইডি অফিসে এনে গভীর রাত পর্যন্ত সাংবাদিকের উপস্থিতিতে ডাক্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তার এরূপ কার্যকলাপ বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী, তথা ‘অসদাচরণের’ শামিল।

সেহেতু জুয়েল চাকমাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুসারে ‘অসদাচরণের’ অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় বিধি ১২ উপবিধি (১) অনুযায়ী গত ২২ জুলাই থেকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।  

এএসপি আফজাল হোসেনকে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু মো. আফজাল হোসেন সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বরিশাল আরআরএফে কর্মরত থাকাবস্থায় ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মোসা. তাজকিয়া জাহান লিপি পারিবারিক বিরোধের কারণে তার স্বামী কনস্টেবল মো. সোহেল রানার বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করার জন্য বরিশাল আরআরএফের কমান্ড্যান্টের কাছে যাওয়ার সময় তার (মো. আফজাল হোসেন) সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে কথাবার্তা ও মেসেজ আদান-প্রদানকালীন তিনি তাজকিয়া জাহান লিপিকে কল এবং এসএমএস করে বিরক্ত করা ও অনৈতিক প্রস্তাবসহ অভিযোগকারীর স্বামী থাকা সত্ত্বেও অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে বর্ণিত কর্মকর্তা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। উক্ত কর্মকর্তা মোসা. তাজকিয়া জাহান লিপিকে তার স্বামীর নামে অভিযোগ দাখিল এবং মামলা করার কু-পরামর্শ দেওয়াসহ তাদের সংসার ভাঙার চেষ্টা করেন, যা নৈতিকস্খলনজনিত আচরণ ও অকর্মকর্তাসূলভ কর্মকাণ্ড হিসাবে পরিগণিত। এ ছাড়া বর্ণিত কর্মকর্তা কনস্টেবল মো. সোহেল রানার তালাকপ্রাপ্ত দ্বিতীয় স্ত্রী লাবনী সরদারকে দিয়ে উক্ত কনস্টেবলের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন অফিসে অভিযোগ দাখিলের কু-পরামর্শ দেন। সুশৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে তার এহেন অপেশাদার আচরণ জনসম্মুখে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। তার এহেন আচরণ ‘অসদাচরণের’ শামিল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সেহেতু মো. আফজাল হোসেনকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুসারে ‘অসদাচরণের’ অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় বিধি ১২ উপবিধি (১) অনুযায়ী গত ২১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি সিলেট রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।

ডিআইজি আনিসুর রহমানকে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু নৌ পুলিশের ডিআইজি মো. আনিসুর রহমান কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি হতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। সেহেতু মো. আনিসুর রহমানকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) ও ৩(গ) অনুসারে অসদাচরণ ও পলায়নের অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় বিধি ১২ উপবিধি (১) অনুযায়ী গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।

এডিসি রাজীব দাসকে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়,  যেহেতু ডিএমপির সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগের সাবেক এডিসি (এসপি পদে সুপার নিউমারারারি পদোন্নতি পাওয়া) রাজীব দাস কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে গত ২ নভেম্বর হতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। সেহেতু রাজীব দাসকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) ও ৩(গ) অনুসারে অসদাচরণ ও পলায়নের অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় বিধি ১২ উপবিধি (১) অনুযায়ী গত ২ নভেম্বর থেকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।

বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এইচবি/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ